শরীর ক্রমশ পাতলা হওয়ার কারণ জানলে অবাক হবেন? Shocking reasons for sudden weight loss ?

hocking reasons for sudden weight loss
অনেকে লক্ষ্য করেন যে তাদের শরীর ক্রমাগত পাতলা হয়ে যাচ্ছে, যদিও তাদের খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন কার্যকলাপ অপরিবর্তিত রয়েছে। এ ধরনের ওজন হ্রাসের(Shocking causes of weight loss) পেছনে কিছু কারণ থাকতে পারে। এটি কখনও স্বাভাবিক হতে পারে, আবার কখনও এটি স্বাস্থ্য…… একটি লক্ষণও নির্দেশ করতে পারে। আসুন, আমাদের শরীর কেন ক্রমাগত পাতলা হয়ে যেতে পারে সে সম্পর্কিত সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
১. অপর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ
শরীরের ওজন নির্ভর করে ক্যালোরি গ্রহণ ও ব্যয়ের অনুপাতের ওপর। যদি আপনি প্রতিদিনের প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্যালোরি গ্রহণ করেন, তবে আপনার শরীরের ওজন হ্রাস পাবে। দীর্ঘ সময় ধরে যদি পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার থেকে বিরত থাকেন, তবে শরীর দুর্বল হতে পারে এবং ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকবে।
২. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ শরীরের ওপর বিপুল প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ শরীরের বিপাকীয় হার (Metabolism) বাড়িয়ে দেয়, ফলে ওজন কমিয়ে দেয়। তাছাড়া মানসিক উদ্বেগের কারণে অনেকেই খাবার ভুলে যান বা খেতে চায় না, যা ওজন হ্রাসের একটি বড় কারণ হতে পারে।
৩. থাইরয়েডের সমস্যা
হাইপারথাইরয়েডিজম এমন একটি অবস্থা যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন করে। এটি শরীরের বিপাকীয় হার বাড়িয়ে দেয়, ফলে শরীর দ্রুত ক্যালোরি পোড়ায় এবং ওজন হ্রাস পেতে থাকে। যদি আপনি একবারে দ্রুত ওজন কমতে দেখেন এবং অতিরিক্ত ঘাম, হাতের কাঁপুনি অথবা অস্থিরতা অনুভব করেন, তাহলে থাইরয়েড পরীক্ষা করাতে হবে।
৪. ডায়াবেটিস
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে শরীর দ্রুত ওজন হারাতে পারে। উচ্চ রক্তে শর্করার পরিমাণ শরীরের চর্বি ও পেশি শক্তির জন্য ব্যবহার করে, যা ওজন কমিয়ে দেয়। যদি ওজন কমানোর সাথে অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব এবং ক্লান্তি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়, তবে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো জরুরি।
আরো পড়ুন:মানুষ তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যায় কেন ?
আরো পড়ুন:গ্রীষ্মকালে কিভাবে ত্বকের যত্ন নেবেন?
৫. পরজীবী সংক্রমণ
শরীরে পরজীবী সংক্রমণ হলে তা হজমক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং পুষ্টি শোষণ প্রক্রিয়াকে ব্যহত করতে পারে। এর ফলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না এবং ওজন কমে যায়। পরজীবী সংক্রমণের ফলে সাধারণত পেটব্যথা, বমি ভাব, দুর্বলতা এবং অ appetit দেখা যায়।
৬. ক্যান্সার
ক্যান্সার শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে, যা অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হ্রাস ঘটাতে পারে। বিশেষত যদি শরীরের ওজন দ্রুত কমে যায় এবং সাথে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্য এবং অজানা কারণে শরীরের শক্তি হ্রাস পায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৭. হজমের সমস্যা
ইনফ্লেমেটরি বোয়েল ডিজিজ (IBD), সেলিয়াক ডিজিজ বা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা (Lactose Intolerance) শরীরের পুষ্টি শোষণের প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে। এর ফলে শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালোরি এবং পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না, যা ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে।
৮. অতিরিক্ত ব্যায়াম
যারা অতিরিক্ত ব্যায়াম করেন বা হঠাৎ করে বেশি শারীরিক কসরত করতে শুরু করেন, তারা যদি পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করেন তবে দ্রুত ওজন হারাতে পারেন। অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ানোর ফলে শরীর শক্তি জমাও করতে পারে না এবং ক্রমাগত ওজন হ্রাস পেতে থাকে।
৯. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ওজন হ্রাস হতে পারে। যেমন, কিছু এন্টিডিপ্রেসেন্ট, কেমোথেরাপি ঔষধ এবং কিছু ডায়াবেটিসের ঔষধ ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
১০. অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্যের সেবন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মাদক সেবন শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে পারে এবং খাবার গ্রহণের প্রতি অনীহা তৈরি করতে পারে। এর ফলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না এবং ওজন দ্রুত হ্রাস( weight loss) পেতে পারে|
করণীয়
পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন: খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন: যদি ওজন কমানোর পেছনে কোনো চিকিৎসাগত লক্ষণ দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
স্ট্রেস এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও পর্যাপ্ত রাতের ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
অতিরিক্ত ব্যায়াম পরিহার করুন: শারীরিক পরিশ্রমের সাথে পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ নিশ্চিত করুন।
পর্যাপ্ত জল পান করুন: শরীরের হাইড্রেশনের ঠিক রাখতে, হজম প্রক্রিয়া উন্নতি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
যদি শরীরের ভর অযথা হ্রাস পেতে থাকে, তাহলে সেটিকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। এটি গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার সূচনা হতে পারে। সঠিক পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন। যদি আপনার ভর দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট সাধ্য হচ্ছে, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।